মনোয়ার হোসেন।।
গত তিন বছর ধরে কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন মোঃ কাউছার। পেশায় তিনি হোটেল বাবুর্চি। দিন দিন তার কিডনি সমস্যা বেড়েই চলছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আগামী ১৯ ডিসেম্বর ঢাকা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কিডনী পাথর অপারেশন করানোর তারিখ ছিল। হতদরিদ্র কাউছার ধার দেনা করে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা জোগার করে।
সোমবার রাতে টাকা গুলো ঘরে রেখে বের হয় কাউছার। তার কিছুক্ষণ পরেই পার্শ্ববতী একটি ঘর থেকে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে মুহুর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে কাউছার সহ তার পাঁচ ভাইয়ের ঘরে। আগুনে পুড়ে যায় সবগুলো ঘর। বের করতে পারেনি নগদ টাকা সহ কোন জিনিসপত্র। তার চোখের সামনে পুড়ে ছাই চিকিৎসার জন্য জমানো টাকা।
এমন হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে কালিকাপুর গ্রামের আমির হোসেনের ঘর থেকে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। পাশাপাশি ঘর হওয়ায় মুহুর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও প্রবেশের রাস্তা সরু হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না থাকায় আগুন নিভাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। স্থানীয়রা শত চেষ্টা করেও আগুন নিভাতে ব্যর্থ হয়। মুহুর্তের মধ্যে পুড়ে যায় আলী আশ্রাফ, ইউসুফ মিয়া, আমির হোসেন, কাউছার আলম ও হাসানুজ্জামানের বসত ঘর।
আগুনের হাত থেকে রক্ষা পেতে হুড়াহুড়ি করে বের হওয়ার সময় টিনে কাটা গিয়ে ইসমাইল হোসেন ও আরমান মিয়া নামে দুইজন গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। আগুনে ৫ পরিবারের বসত ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছেন ২৩ নারী পুরুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, আগুনের সুত্রপাত হওয়ার সাথে সাথে আমরা গ্রামবাসীরা পানি নিয়ে এগিয়ে যায় সময়মত ফায়ার সার্ভিস ও ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু প্রবেশ পথ সরু হওয়ায় এবং গণ বসতি হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না থাকায় আগুন নিভানো সম্ভব হয়নি। যার কারণে ৫টি ঘরই পুড়ে ছাই হয়ে যাই।
কিডনী আক্রান্ত রোগী কাউছার বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবৎ কিডনী রোগে আক্রান্ত। ১৯ ডিসম্বের ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কিডনী পাথর অপারেশনের তারিখ ছিল। বিভিন্ন জন থেকে ধার দেনা করে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা জমা করে টাকা গুলো ঘরে রাখি। সর্বনাশা আগুনে আমার চিকিৎসার টাকা সহ বসত ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এখন আমি কি দিয়ে চিকিৎসা করাবো?
চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান সুজন বলেন, খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। কিন্তু ঐ এলাকাটি ঘনব সতি এবং রাস্তা সরু হওয়ার কারণে এবং পানি স্বল্পতার কারণে আগুন নিভাতে আমাদের বেগ পেতে হয়। তাই ঘরগুলো আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রহমত উল্লাহ বলেন, আগুনে ৫টি ঘর পুড়ে যাওয়ার সংবাদ পেয়েছি। প্রকল্প কর্মকর্তাকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের জন্য পর্যাপ্ত কম্বল পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছি। সরকারি ভাবে আর্থিক সহায়তার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page